চিকিৎসকের পরামর্শ: স্থূলতা কমাতে সার্জারি

স্থূলতা বর্তমানে অন্যতম বড় একটি সমস্যা। আপনি যখন মারাত্মক স্থূল, মানে বিএমআই ৩২-এর বেশি, তখন যদি মনোযোগ দিয়ে ওষুধ, ব্যায়াম ও ডায়েট করেন তাহলে গড়ে ওজন কমে ১০ কেজি। কিন্তু এটা খুব কম লোকের বেলায়ই দীর্ঘস্থায়ী হয়। দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি। স্থূলতার সমস্যা সমাধানে এ সার্জারির উপকারিতা হলো, এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করে এবং ওজন কমানোর পাশাপাশি স্থূলতাজনিত রোগ যেমন— উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কমায়।

ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি
প্রথম শুরু হয় ষাটের দশকে। গত ১০ বছরে এটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ হলো, যত দিন যাচ্ছে অধিক পরিমাণ মানুষ মোটা হচ্ছে। আর এ অপারেশনে শরীরের বাইরে ৫টি ফুটো (key hole surgery) করে ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি করা হয়। আগের মতো বড় করে পেট কাটা হয় না। ফলে রোগীর বেশিদিন হাসপাতালে থাকতে হয় না এবং শারীরিক কষ্ট কম হয়।

যেভাবে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি কাজ করে
প্রথম উপায়: পাকস্থলীর আয়তন কমিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় উপায়: ফলে কম খাবার খেতে হয় এবং কম খাবার শোষিত হয়। আর কে না জানে কম খাবার মানে কম ক্যালরি।

অপারেশনের নাম
প্রথম উপায়: গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ড ও স্লিভ গ্যাস্ট্রেকটমি।
দ্বিতীয় উপায়: গ্যাস্ট্রিক বাইপাস।

গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ড: এটি অপেক্ষাকৃত সহজ। পাকস্থলীর আয়তন বাড়ানো-কমানো যায়। কারণ এতে ব্যান্ড পরানো হয় এবং পরে খুলে ফেলা যায়। খুলে ফেললে পাকস্থলী আগের অবস্থায় ফিরে আসে। বারবার চেকআপ করতে হয়।
স্লিভ গ্যাস্ট্রেকটমি: পাকস্থলীর কিছু অংশ কেটে বাদ দেয়া হয়। অল্প খাবারে পেট ভরে যায়।
গ্যাস্ট্রিক বাইপাস: একে রুক্স এন ওয়াই গ্যাস্ট্রিক বাইপাসও বলে। সবচেয়ে ভালো উপায়। ১৯৬০ সাল থেকে হয়ে আসছে। পাকস্থলীর একটা বড় অংশ কেটে ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে জোড়া লাগানো হয়। ফলে কঠিন ও তরল খাদ্য সরাসরি খাদ্যনালি থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যায়। পাকস্থলীর কাটা অংশ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।

ঝুঁকি কতটুকু: ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি কোনো কসমেটিক সার্জারি নয়। এতে অপারেশনের পর মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১ থেকে ১ শতাংশ। এ অপারেশনে দুই ধরনের ঝুঁকি থাকে। প্রথমত. অপারেশনজনিত ও দ্বিতীয়ত. স্থূলতার সঙ্গে জড়িত রোগ যেমন— উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকলে।

জেনে রাখা ভালো: সার্জারি করার আগে স্থূলতা সম্পর্কে জানুন। তাহলে বুঝতে পারবেন কেন আপনি মোটা হচ্ছেন এবং এটি প্রতিরোধে কী কী করতে পারেন। যদি অনেক ওজন কমাতে হয়, তবে ধাপে ধাপে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করুন। দ্রুত ওজন কমানোর অবাস্তব লক্ষ্য স্থির করবেন না। মাসে এক কেজি বা দুই কেজি ওজন কমান, যা করতে আপনার বেশি কষ্ট হবে না। এমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করুন। নিজেকে বেশি চাপ দিলে দ্রুত হতাশ হয়ে পড়বেন এবং মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন। তাই প্রাত্যহিক বা সাপ্তাহিক ব্যায়াম ও ওজন মাত্রা নির্ধারণ করুন। খাদ্যতালিকায় সামান্য পরিবর্তন আনুন এবং ধীরে ধীরে এ পরিবর্তন কার্যকর করুন। ঝট করে পরিবর্তন আনলে আপনার জীবনযাপন প্রণালির সঙ্গে চট করে মানিয়ে নিতে পারবেন না।

চিকিৎসা পরিকল্পনা: নতুন করে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, দৈহিক শ্রমের পরিবর্তন— একসঙ্গে এসব পরিবর্তন আপনাকে অস্থির করে তুলবে। তাই মনের জোর একটু বাড়ান। ধীরে ধীরে সবকিছুতে স্বল্পমাত্রার পরিবর্তন আনুন, যা আপনার মেনে চলতে কষ্ট হবে না। আবার কঠোর হবে না। নিজের প্রতি নিজে সৎ থাকুন। নিজেকে তৈরি হতে সময় দিন। কী খাচ্ছেন, কতটুকু হাঁটছেন- এসবের বৃত্তান্ত লিখে রাখুন। ডায়াবেটিস হলে রক্তে চিনির মাত্রা, বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার রেজাল্ট ইত্যাদি লিখে রাখুন। খাওয়ার হিসাব দেখলে বুঝবেন কতটুকু বাড়তি খাচ্ছেন।

অধ্যাপক সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক ও কাউন্সেলর
শারীরবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান
মার্কস মেডিকেল কলেজ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *