কাশ্মীরে পুলিশি নির্যাতনে জঙ্গি হয়েছেন আদিল, দাবি বাবার

কাশ্মীরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদিন তাকে ঘিরে ধরে পুলিশ। প্রচণ্ড মারধর করে। তারপর নাকখত দেওয়ায়। নাকখত দিতে দিতেই তাকে ঘোরানো হয় পুলিশের জিপের চার পাশে। বছর তিনেক আগের ওই ঘটনাই ক্ষেপিয়ে তুলেছিল পুলওয়ামার আত্মঘাতী জঙ্গি জইশ জঙ্গি আদিল আহমেদ দারকে। দাবি করেছেন আদিলের বাবা, মা।

তাদের বক্তব্য, ‘‘আদিল ছোটবেলায় এমন ছিল না। স্কুলে যেত, আসত। মোটামুটি শান্ত স্বভাবেরই ছেলে ছিল আদিল। কিন্তু ওই ঘটনাই তাকে রাগিয়ে দিয়েছিল।’’

পুলওয়ামার ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কাকাপোরায় আদিলের বাড়ি। তার স্কুল ছিল হাঁটা পথে বড়জোর ২ কিলোমিটার দূরে। আদিলের বাবা গুলাম হাসান দার বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরি করেন হরেক রকমের জিনিস। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে শুক্রবার আদিলের বাবা বলেছেন, ‘‘একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ও (আদিল) স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে পুলিশ ওকে ধরে। অনেক ক্ষণ আটকে রাখে। প্রচণ্ড মারধর করে। নাকখত দেওয়ায়। নাকখত দিতে দিতে ওকে পুলিশের জিপের চার পাশে ঘোরানো হয়। এতে ও খুব অপমান বোধ করেছিল। মাঝেমধ্যেই ওই ঘটনার কথা বলতো আমাদের। পুলিশ ওর সঙ্গে কেন এমন ব্যবহার করল, তা নিয়ে বার বারই প্রশ্ন করতো আমাদের।’’

গুলাম জানিয়েছেন, তিন বছর আগেকার ওই ঘটনার পর থেকেই অনেক বদলে গিয়েছিল আদিল। তার স্বভাবটাও খুব রুক্ষ হয়ে গিয়েছিল। গুলাম বলেছেন, ‘‘মনে হত, ও জঙ্গিদের দলে ভিড়ে যেতে চাইছে।’’

কেন পুলিশ তাকে ধরে মারধর করেছিল? গুলাম জানিয়েছেন, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আদিল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়েছিল। গুলামের কথায়, ‘‘কাজটা যে ও খুব বুঝেসুজে করেছিল, তা মনে হয় না। কিন্তু তার জন্য ওর কপালে যা জুটেছিল, তা ওকে খুব চটিয়ে দিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই বলত, জঙ্গিদের দলে ভিড়ে যাবে।’’

আদিলের মা ফাহমিদা বলেছেন, ‘‘ওই ঘটনায় ও খুব রেগে গিয়েছিল। সব সময় চাইত বদলা নিতে। আমি সব সময় চাইতাম ও জঙ্গিদের সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে আসুক। বোঝাতাম। আমি ওকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।’’

স্কুলছুট হয়েই আদিল নাম লিখিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদে। সেখানে তার আরও দু’টি নাম ছিল। ‘আদিল আহমেদ গাড়ি তাকরানেওয়ালা’ ও ‘ভাকাস কম্যান্ডো অফ গান্ডিবাগ’।

শুক্রবার আদিলের মরদেহ ছাড়াই জানাজা পড়েছেন পরিবারের লোকজন ও গ্রামের পড়শীরা। তবে কাকাপোরার সেই গ্রামে যাতে বাইরের লোকজন যেতে না পারেন, ফের অশান্তির আবহ তৈরি না হয়, সে জন্য কাকাপোরার কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেই নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আটোসাঁটো রাখা হয়েছিল।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *