কাশ্মিরে অস্ত্র হাতে নিলেই গুলি খেতে হবে: ভারতের জেনারেল

সামরিক পথে কাশ্মির সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় কোনও সফলতা না এলেও বলপ্রয়োগের নীতি থেকে সরছে না ভারত। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে কাশ্মিরবাসীকে। এদিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে এস ঢিলোঁ এক সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিয়েছেন, কাশ্মিরে কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই তাকে গুলি খেতে হবে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় বেসামরিকদের হস্তক্ষেপ না করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

জেনারেল ঢিলোঁ তার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মূলত ক’দিন আগে করা সেনাপ্রধানের মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনিও সেনা অভিযানে বাধা দিলে কঠোর পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তরুণদের সঠিক পথে ফেরাতে।

কাশ্মিরের সাম্প্রতিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক পথে কাশ্মির সংকটের সমাধান আসবে না। তবুও বলপ্রয়োগের নীতির পথেই এগোচ্ছে ভারত।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পুলওয়ামাতে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়ি বহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। ওই আত্মঘাতী হামলায় রিজার্ভ পুলিশের ৪০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হওয়ার পর সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ ও কঠোর সেনা-নজরদারি জারি থাকা সত্ত্বেও জঙ্গিদের পেতে রাখা ভয়াবহ বোমায় শনিবার (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি) নতুন করে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা-কর্মকর্তা নিহত হন।

রবিবার রাতে শুরু হওয়া সেনা অভিযানের ধারাবাহিকতায় সোমবার সেনা-জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধে দুই পক্ষের ৭ জন প্রাণ হারায়। তা সত্ত্বেও সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলপ্রয়োগের নীতি আরও জোরালো করার আভাস দেওয়া হলো।

মঙ্গলবার সেনা কর্মকর্তা কে এস ঢিলোঁ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরে যেই অস্ত্র হাতে তুলে নেবে, তাকেই শেষ করে দেওয়া হবে। আমি প্রত্যেক পরিবারকে বলছি, সন্তানদের বন্দুক পরিত্যাগ করে আত্মসমর্পণের পথে আসবে বলুন। এটাই সঠিক পথ। যদি তা না হয়, অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া যে কাউকে গুলি করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, বেসামরিক এলাকায় যখন বন্দুকযুদ্ধ হয়, তখন জনসাধারণকে আমরা নিরাপদে থাকতে বলি। অভিযান পরিচালনার আওতায় থাকা এলাকা ঘেরাও করে রাখি। মানুষকে বলি, তারা যেন বাড়িতেই থাকে এবং এ ব্যাপারে মাথা না ঘামায়। বেসামরিক নিহতের সংখ্যা সীমিত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
কাশ্মিরের রাস্তায় ভারতীয় সেনাবাহিনী

ক’দিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত একই কথা বলেছিলেন। হামলার পর তিনি হুঁশিয়ার করেছিলেন, ‘আপনারা যদি বাগে না-আসেন এবং সেনাবাহিনীর কাজে বাধা সৃষ্টি করেন, তাহলে শুনে নিন আমরা এতদিন যেভাবে শান্তিপূর্ণ পথে অভিযান পরিচালনা করে এসেছি তা কিন্তু আর করব না।’

সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, ‘কিছু তরুণ হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হয়েছে, কিন্তু তারা যদি নিজেদের না-পাল্টায় আমরাও কিন্তু শক্ত হাতে তাদের মোকাবিলা করব। সেনাদের কাজে বাধা এলে আমাদের হাতের অস্ত্র ব্যবহারে কিন্তু পিছপা হব না।’

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়; পুলওয়ামা হামলার মূল হোতা আদিল আহমেদ দার পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় ভারতকে সমর্থন করতেন। কদিন আগেও তিনি ছিলেন সুফি ধারার অনুসারী। আচমকা সেই মানুষটিই পরিচিত হয়ে উঠলেন জঙ্গি হিসেবে।

গত বছর একইভাবে নিজের চিন্তাধারায় রূপান্তর এনেছিলেন কাশ্মিরি একজন অধ্যাপক। সমাজবিজ্ঞানের সেই মেধাবী শিক্ষার্থী একসময় কার্ল মার্ক্সের বস্তুবাদী তত্ত্বে শনাক্তকৃত ধর্মের অবস্থান নিয়ে আলোচনামুখর থাকলেও সামিল হয়েছিলেন সশস্ত্রপন্থী হিজবুল মুজাহিদীনের পতাকাতলে। গত বছর মে মাসে তিনি ‘শহীদ’ হন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ব্যাপক মাত্রায় সামরিকায়ন, নিরাপত্তা তল্লাশির সূত্রে হওয়া নির্বিচার হয়রানি ও স্বশাসনের অধিকার ক্ষুণ্ন করার মতো বিষয়গুলো স্থানীয়দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ জাগিয়ে তুলছে। তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর দিকে। তা সত্ত্বেও ভারত ক্রমাগত তাদের সামরিক নীতি কঠোর করে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *