বিসিএস এর উদ্যোগে ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ঢাকা : বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) সদস্যদের ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত সম্যক ধারণা প্রদান করতে ‘ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ফর বিজনেস’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।

০৭ নভেম্বর (শনিবার) রাতে অনলাইনে এই প্রশিক্ষন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব জনাব এন এম জিয়াউল হক, পিএএ । তিনি বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটি যত সহজে বলা যায়, এর ক্ষেত্র কিন্তু মোটেও অত ছোট নয়। আমরা ফোরজি  অতিক্রম করে ফাইভ জি এর যুগে প্রবেশ করছি। ফিজিক্যাল যোগাযোগরে চেয়ে এখন অনলাইনে যোগাযোগ আরো বেশি কার্যকর। সময়কে কাজে লাগিয়ে সহজ কথা কিভাবে বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায় তার অন্যতম মাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিং। আমাদের ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল  মার্কেটিং এর সঠিক ব্যবহার শিখে নিজেদের ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করবে তা কর্মশালাগুলোর মাধ্যমে শিখে নিতে পারবে। এতে শুধু ক্রেতারাই লাভবান হবেন এমন নয়। দুপক্ষই এখানে বেচাকেনা এবং কেনাকাটা করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।

বিসিএস সদস্যদের ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর জোর দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার কাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল সংযোগ প্রত্যন্থ অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনায়েদ আহমেদ পলক নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিজেকে যোগ্য করে তোলার সময় এখন। ডিজিটাল মার্কেটিংকে ভালোভাবে রপ্ত করে গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদান করতে পারলেই ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার সফলতা নিশ্চিত। তবে এর সঙ্গে সততাও গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যান্ড ওয়েব পোর্টাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির সদস্য সচিব ও বিসিএস পরিচালক মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া। তিনি বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোন বিকল্প নেই। যেকোন ব্যবসায় গ্রাহকদের কাছে সহজে পণ্যের বার্তা পৌঁছে দেয়ার কার্যকর মাধ্যম হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। সাধারণ বিপণন নীতির সঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটিংকে যুক্ত করে প্রচারণা অব্যাহত থাকলে সাফল্য আসবেই। ডিজিটাল মার্কেটিং একটি বৃহৎ বিষয়। আজ আমরা শুরু করেছি। ভবিষ্যতেও এই বিষয়ের উপর আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত  সচিব এ.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বিসিএস বরাবর নিত্যনতুন বিষয়ে সদস্যদের ব্যবসায় জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে যুগোপযোগী বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করে আসছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সবকিছুতেই ডিজিটাল ছোঁয়া লেগেছে। সোশ্যাল কমিউনিকেশনসহ সবক্ষেত্রেই এখন ব্যবসার প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এই বিষয়গুলো আরো বেশি দৃশ্যমান। আমি আশা করবো এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইসিটি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাকে লাভজনক খাতে পরিণত করতে পারবে।

কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন বিসিএস উপদেষ্টা মোজাম্মেল বাবু। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ঘোষণা দেন। তখন থেকেই মূলত দিন বদলের যাত্রা শুরু। ইনফোর সরকার এক এবং দুই এর কল্যাণে ইউনিয়ন পর্যায়েও পৌঁছে গেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। বাংলাদেশের সব জায়গায় এখন ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ২০০৯ সালে সরকার ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম প্রণয়ন করে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে মানুষ এখন গ্রামে বা প্রত্যন্থ অঞ্চলে বসেও তার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করছে। তাই ব্যবসা এখন আর অঞ্চল বা জেলা বা শহর ভিত্তিক নেই। ব্যবসা এখন পুরো দেশে। ব্যবসাকে প্রান্তিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার অন্যতম হাতিয়ার ডিজিটাল মার্কেটিং।

ডিজিটাল মার্কেটিং কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেয়, তখন আমি বিসিএস এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম। ২০০৯ সালে আমরা ডিজিটাল সামিট করেছিলাম। অনেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটিকে অকল্পনীয় বলে প্রকাশ করেছিল। আমরা ভরসা রেখেছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম। সেই সময় আমরা তিন দিনব্যাপী সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বুঝাতে সেমিনারের আয়োজন করেছিলাম। আর আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমাদের চোখে প্রত্যক্ষভাবেই দৃশ্যমান। ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আইসিটি ব্যবসায়ীদের জন্য যুগোপযোগী। আজকের সেশনে আগত অতিথি এবং প্রশিক্ষণার্থীদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপরে ভবিষ্যতে আমাদের এমন কর্মশালা আরো বৃহৎ আকারে আয়োজিত হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যান্ড ওয়েব পোর্টাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান আরিফুল হাসান অপু এর সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন বিজকোপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কার্যনির্বাহী নাহিদ হাসান। অনলাইনে প্রায় দুই শতাধিক বিসিএস সদস্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি বিসিএস এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়। এসময় প্রায় ১৭০০ দর্শনার্থী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপভোগ করেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে সম্যক ধারণা দিয়ে নাহিদ হাসান বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিং বড় ব্যবসায়ীদের চেয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো খরচের দিক থেকে বড় প্রতিষ্ঠানের সমান হতে পারবেন না কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এ আপনার এবং বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ডিজিটাল মার্কেটিংকে পরিপূর্ণভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হয়। কার্যকর ওয়েবসাইট, রাইট ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং প্ল্যানকে যদি ঠিকমতো ব্যবহার করা যায় তাহলে আপনার প্রদর্শিত বা বিক্রির জন্য পণ্য সহজেই ডিজিটাল প্লাটফর্মে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাবে। এছাড়া এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, আকর্ষণীয় কনটেন্ট, পণ্যের ব্যবহারের নিয়ম, সমস্যা এবং সমাধানের উপর ভিডিও বা অডিও গ্রাহকদের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষণ করতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী বিপণন নীতি করা গেলে এই প্লাটফর্মে সফলতা সহজেই অর্জন করা যায়।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ এবং মার্কেটিং পলিসিকে কীভাবে সাজানো দরকার সে বিষয়ে দর্শনার্থীদের একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কর্মশালায় বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং যুগ্ম মহাসচিব মো. ‍মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বক্তব্য প্রদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে র‌্যাফেল ড্র এবং ডিজিটাল সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি টেকজুমডটটিভি এর সৌজন্য বিসিএস এর ফেসবুক পেইজে সম্প্রচারিত হয়েছে।

মৈত্রী/এএ

শেয়ার করুন: